আদর্শ সমাজ গড়তে ইসলামের ভূমিকা

সামাজিক অনাচার বা সমস্যা সমাজের মারাত্মক ব্যাধি স্বরূপ। সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, মাদকাসক্তি, প্রতারণা, হত্যা-গুম প্রভৃতি সমাজে নানা সমস্যার জন্ম দেয়। এগুলো সমাজ বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। শান্তি-শৃঙ্খলা, সংহতি ও নিরাপত্তা নষ্ট করে। মূলত যেসব কর্মকা- ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ এবং মানুষের চোখে ও সামাজিক দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় সেগুলোই সামাজিক অনাচার বা সমস্যা।

সামাজিক অনাচার ও সমস্যার সমাধানে ইসলাম সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। যেমন সামাজিক অনাচারের অন্যতম জুয়াকে ইসলামে ঘৃণ্য কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মিথ্যাচারকে মুনাফিকের লক্ষণ বলা হয়েছে। হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা মিথ্যাচার পরিহার কর, কেননা মিথ্যা পাপের দিকে নিয়ে যায়, আর পাপ নিয়ে যায় জাহান্নামের দিকে।’ প্রতারণাকারীকে জাহান্নামি বলা হয়েছে। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি ক্রেতাকে অবহিত না করে (গোপন রেখে) দোষযুক্ত পণ্য বিক্রি করে সে অবিরাম আল্লাহর ঘৃণা ও ফেরেশতাদের অভিশাপে পতিত থাকবে।’ ঘুষ দাতা ও গ্রহীতার ওপর আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) অভিশাপ রয়েছে। ধূমপানকে ইসলাম হারাম করেছে। মাদকাসক্তিকে ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মাদকাসক্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করে সৎসঙ্গ গ্রহণের তাগিদ করা হয়েছে ইসলামে। চুরি করলে হাত কেটে ফেলার শাস্তি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ছিনতাই, রাহাজানি, মানুষকে ঠকানো এ ধরনের যাবতীয় অনাচারকে ইসলামে নিষিদ্ধ ও হারাম করা হয়েছে। নরহত্যাকে ইসলামে মহাপাপ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, একজনকে হত্যা করা মানে সারা দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করা।

ইসলাম অন্যায় ও অনাচারমূলক কাজ থেকে শুধু নিষিদ্ধই করেনি, কিভাবে পাপমুক্ত জীবন গড়তে হবে এর সুস্পষ্ট নীতিমালাও বর্ণনা করেছে। সামাজিক অন্যায় ও অসততার বীজগুলো যেন অঙ্গুরেই বিনাশ হয়ে যায় সে ব্যবস্থাপত্র ইসলামে দিয়েছে। নিছক বর্ণনা ও ব্যাখ্যা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয় ইসলামের নীতিমালা, প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এর উদাহরণও ইসলাম স্থাপন করেছে। ইসলামি সমাজব্যবস্থায় অন্যায়-অনাচার মূলোৎপাটনের যাবতীয় নির্দেশনা রয়েছে। সমস্যাসঙ্কুল সমাজের স্থিতিশীলতা ও গতিময়তা ফিরিয়ে আনার জন্য ইসলামের কোনো বিকল্প নেই। ইসলামি অনুশাসনই পারে সমাজকে কাক্সিক্ষত মানে উন্নতি করতে এবং মানুষের বসবাস উপযোগী করে গড়ে তুলতে।