পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ফিঙ্গার প্রিন্টের রহস্য

বর্তমানে প্রায় অধিকাংশ অফিস আদালতেই এখন ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্যবহার দেখা যায়। প্রতিদিন অফিসে ঢুকতে আর বের হতে দুবার মেশিনে চাপতে হয় বৃদ্ধাঙ্গুল। আর দরকারি কাগজে যারা সাক্ষর করতে পারেন না, তাদের থেকে নেয়া হয় বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ। মানব দেহে এত অঙ্গ থাকতে আঙ্গুলের এত গুরুত্ব কেন? কী আছে আঙ্গুলের ছাপে? এটা এক জটিল প্রশ্ন।

সংক্ষেপে বললে বলতে হয়, মানবদেহের এই একটি আঙ্গুলের ভাঁজে রয়েছে মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সব নিদর্শন। এটাকে এক কথায় ডাটা ব্যাংকও বলা যেতে পারে। এই আঙ্গুলের একটি ডিএনএ’র কোড ছাপলে কয়েক লক্ষ পৃষ্ঠার আস্ত বই বেরিয়ে আসবে। ফিঙ্গার প্রিন্টের এই রহস্য সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৬৮৪ সালে। ইংলিশ ফিজিসিয়ান, উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও অনুবীক্ষণ যন্ত্রবিদ নিহোমিয়া গ্রিউ (১৬৪৭-১৭১২) একটি বৈজ্ঞানিক দৈনিকে করতল ও আংগুলের ছাপের রহস্যের সংযোগ সূত্রের ধারণার উত্থাপন করেন।

এর পর ১৬৮৫ সালে ডার্চ ফিজিসিয়ান গোভার্ড বিডলো (১৬৪৯-১৭১৩) এবং ইটালিয়ান বিজ্ঞানী মারসিলো বিডলো (১৬২৮-১৬৯৪) এনাটমির ওপর বই প্রকাশ করে ফিঙ্গার প্রিন্টের ইউনিক গঠনের আলোচনা উত্থাপন করেন। তবে এ আলোচনা এখানেই থেমে যায়। পরবর্তীতে দীর্ঘ বিরতির পর ১৮০০ সালে ফিঙ্গার প্রিন্ট পুনরায় জোরালোভাবে বৈজ্ঞানিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৮৭৫ সালে জেন জিন্সেন নামক এক ইংলিশ বিজ্ঞানি আবিষ্কার করেন আঙ্গুলের ছাপ একটি অসাধারণ বিষয়। এর রেখার ধরণ একটি আরেকটির চেয়ে একেবারেই ভিন্ন।

বাংলাদেশের বিজ্ঞানী সৈয়দ মুহাম্মাদ কাজী আজিজুল হকও ফিঙ্গার প্রিন্টের রহস্য উদ্ঘাটন করেন বলে তথ্য রয়েছে এবং তার উদ্ঘাটিত রহস্যটি ব্রিটিশ কর্মকর্তা এওয়ার্ড হেনরি চুরি করেছিলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। ১৪০০ বছর আগের মানুষজন যদিও ফিঙ্গার প্রিন্টের অতশত রহস্য জানতেন না কিন্তু আল্লাহ পাক কুরআনে কারীমে এর রহস্যের কথা আলোচনা করেছেন। সুরা কিয়ামার ৩নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষ কি মনে করে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করতে পারবো না? বরং আমি তার আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম।’

সুরা ইয়াসিনের ৭৮ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভুত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে, কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে যখন সেগুলো পচে গলে যাবে?’ মূলত এ আয়াতটি নিয়ে কাফেররা হাসাহাসি করত। তারা ইঙ্গিত করে বলত, আমাদের আঙ্গুল অস্তিমজ্জাগুলো যখন পচে গলে যাবে সেগুলো থেকে পুনরায় কিভাবে আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করবেন।

তখন সুরা কিয়ামার আয়াতটিতে মানবদেহের রহস্যগুলোর কথা উল্লেখ করেন। মানবদেহের আঙ্গুলের ছাপকে একজন ব্যক্তির পুরো ডাটা ব্যাংক বলা হয়। এখানেই ব্যক্তির পুরো রহস্য ও তথ্যাবলি লুকিয়ে থাকে। পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের আঙ্গুলের ছাপ সম্পূর্ণ আলাদা। একজনের আঙ্গুলের ছাপ অন্যজনের সঙ্গে কোনোভাবেই সাদৃশ্যপূর্ণ নয়।

পৃথিবীর সৃষ্টির প্রথম মানুষ থেকে শুরু করে শেষ মানুষ পর্যন্ত কোনো দুজনের আঙ্গুলের ছাপই এক রকম হবে না। মানুষের আঙ্গুলের আগার রেখার গঠন এবং গড়ন মাতৃগর্ভের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই পূর্ণ হয়। এর নানাবিধ ব্যাখ্যা রয়েছে, একটি হল, মানুষের সকল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এই আঙ্গুলের ছাপে এনকোডেড রয়েছে। কেবল আঙ্গুলের মাথার ছাপ দিয়েই মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জানা সম্ভব।

মহান সৃষ্টিকর্তা কুরআনে মানুষের পুনরুত্থান ও তার বিচারের যে বিষয় উল্লেখ করেছেন সেটি মানবদেহের এই এনকোডেডের মাধ্যমেই সম্ভব। সুতরাং মানুষের পুনরুত্থানের সময় আল্লাহ মানবদেহ পুরাপুরি ফিরিয়ে দেবেন এবং বিচার করবেন। মানবদেহে লুকিয়ে থাকা এসব চমকপ্রদ আবিস্কার এবং কুরআনের বর্ণনা সে দিকেই ইঙ্গিত করে।

বিজ্ঞানের আরেকটি যুগান্তকারী আবিস্কার মানুষের ডিএনএ। ডিএনএ আবিস্কার হওয়ার পর মানুষ সৃষ্টির সরল ব্যাখ্যাগুলো বাতিল হয়ে গেছে। মানুষের একটি ডিএনএ কোটি কোটি কোড সম্বলিত। মানুষের চুলের রঙ থেকে শুরু করে নখ পর্যন্ত সব তথ্য এই কোডে রয়েছে। আঙ্গুলের আগার একটি ডিএনএ’র কোড ছাপলে হাজার হাজার পৃষ্ঠার তথ্য বেরিয়ে আসবে। আর আঙ্গুলের আগার একটি ডিএনএ দিয়ে ব্যক্তির সব তথ্য জানা সম্ভব।